মানিকগঞ্জে যমুনায় অবৈধ বালু উত্তোলন, ভাঙ্গনের হুমকিতে কয়েক হাজার পরিবার

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া, বাচামারা ইউনিয়নের পুড়ো যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বাল্বহেড ড্রেজার ও কাটার মেশিন ব্যবহার করে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব প্রভাবশালী ইজারদারের ১০/১৫ জনের সিন্ডিকেটের।

যমুনা নদী অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের দখলে ভাঙ্গনের হুমকিতে কয়েক হাজার পরিবার। প্রতিদিন অবৈধ ভাবে যমুনা নদীতে বালু উত্তোলনের কয়েক লক্ষ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বালু মহলের ইজারদার জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান প্রিন্স,দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আনিসুর রহমান সহ ওই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যরা।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অপকর্মে মদদ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এবং নৌ পুলিশের দাবী স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরে ইজারাকৃত স্থানের সীমানার বাহিরে গিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করছে এই প্রভাবশালী চক্র ।

এতে নদীর পার্শ্ববর্তী বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বেপারী পাড়া,বাঘুটিয়া পুড়ান পাড়া,চরকাটারী পাড়া,ফকির পাড়া,সিকদার পাড়া,পারুরিয়া,মল্লিক পাড়া,বাচামরা ইউনিয়নের কল্যানপুর,বাগসাইট্টা,সুবুদিয়া,চরভারাঙ্গা,বাচামারা,চুয়াডাঙ্গা গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে নিম্নআয়ের মানুষজন নিঃস্ব হওয়ার মুখে পড়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে ১০/১২ টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ভাঙনরোধ না হলে বাঘুটিয়া,বাচামারা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের বসতভিটা,আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই রাত-দিন ২৪ ঘন্টা কয়েকটি বাল্বহেড ড্রেজার ও কাটার মেশিন ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার ওপর অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় আরও দুর্বল হয়ে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে ।
এলাকাবাসীর পক্ষে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: গোলাম ইয়াছিন ও উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা তাজুল ইসলামসহ কয়েক শত জনসাধারনের স্বাক্ষরিত গত ৪ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গত ৬ আগস্ট জেলা প্রশাসক এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারী বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: গোলাম ইয়াছিন ও উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, ইজারদার জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান প্রিন্স, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: আনিসুর রহমান,ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন,ইউপি সদস্য নাজমুল ইসলাম, মো: তোতাসহ ১০/১২ জনের সিন্ডিকেট এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ।
আমাদের বাড়িঘরের একেবারে কাছ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কয়েকটি গ্রাম নদীতে চলে যাবে। তারা নদীতে বালু উত্তোলনের সময় ৫/৬ টি স্পিডবোট নিয়ে ১৫/২০ জনের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট অস্ত্রে সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নদীতে মহড়া দেয় ।
অভিযোগে বলা হয়, সরকারি ভাবে যমুনা নদীর দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুর এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা থাকলেও সংশ্লিষ্ট চক্রটি সেটি না মেনে রাহাতপুর মৌজা থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দুরে বাঘুটিয়া বাচামারা সিমানায় অংশে বাল্বহেড ড্রেজার ও কাটার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে চক্রটির সদস্যরা ভয়ভীতি দেখায়। নানাভাবে হয়রানি করেন। ঐ এলাকার ১০/১৫ বাসিন্দা বলেন,আমরা কিছু বললেই তারা হুমকি দেয়। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা অনেক শক্তিশালী, আমরা অসহায়।
বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: আমজাদ হোসেন বলেন,আমি সবসময় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে। আমার ইউনিযনের বেশ কয়েকটি স্পটে নদী ভাঙ্গন মারাত্মক রুপ ধারণ করেছে। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবগত করেছি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডকে সরজমিনে গিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।